সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৫০ পূর্বাহ্ন
ক্রাইমসিন ডেক্সঃ
যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে দুর্যোগের ঘনঘটা কাটিয়ে ওঠার জন্য গড়ে ওঠে একটি অধিদপ্তর, যার নাম দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর। কিন্তু বায়ান্ন বছরেও নিজেদের দুর্যোগের সমাধান করতে পারে নাই ।
ত্রাণ কার্য পরিচালনার জন্য ৪৯৫ টি উপজেলায় নেই কোন গাড়ি। উপজেলা অফিসে এখনো নিয়োগ হয়নি উপ সহকারী প্রকৌশলী।
প্রতি উপজেলায় একজন কর্মকর্তা ও একজন অফিস সহকারী দিয়ে চলছে অফিসের কার্যক্রম। পদ সৃষ্টি করা থাকলেও নিয়োগ হচ্ছে না উপসহকারী প্রকৌশলীদের।
এই ৫২ বছর ধরেই এক অফিস কর্মকর্তা ও অফিস সহকারি দিয়ে চলছে উপজেলার কার্যক্রম। আর জেলা চলছে এক কর্মকর্তা ও ৬ কর্মী দিয়ে।
এতে চলমান বন্যা ছাড়াও বড় বড় দুর্যোগে সঠিকভাবে প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছে না এ অধিদপ্তর। এতে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বর্তমানে দেশ স্মরণকালের অন্যতম ভয়াবহ বন্যার কবলে দুর্গতদের উদ্ধার ও ত্রাণ দিতে কাজ করছে ছাত্র-জনতা ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
এ সময় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সবচেয়ে বেশি তৎপর থাকার কথা থাকলেও তাদের নেই সেই সক্ষমতা, সেই জনবল। অধিদপ্তর সংশ্লিষ্টরা জানান উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও সহকারি এই দুজন দিয়ে চলছে উপজেলা ত্রান কাজ।
জেলায় কর্মরত আছেন একজন কর্মকর্তা ও ৬ জন কর্মী।
এই হচ্ছে তাদের সক্ষমতা। এমনকি ত্রান কার্য পরিচালনার জন্য জেলায় একটি গাড়ি ও নেই। এর ফলে বড় বড় ঝড় বন্যা ও দুর্যোগে ত্রাণ পরিচালনা করা অনেক সমস্যা হয়ে যায়। মোট পদ ২৭১০ টি।
৫২ বছরে কর্মী বারার বদলে বেশ কিছু পদ খালি। এমন অবস্থায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন ২০১২ বাস্তবায়ন মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি ও উপ সহকারী প্রকৌশলী,কার্যসহকারী,অফিস সহায়কদের নিয়োগ না হলে এসংকটের সমাধান হবে না। চলমান এই সংকটের জন্য ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় দায়ী। কারণ দীর্ঘদিন এই অবস্থা চললেও বিষয়টি নিয়ে কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের উপ প্রকল্প পরিচালক মোঃ ইসমাইল হোসেন বলেন, সবচেয়ে বড় সমস্যা জনবল সংকট। ১৯৭২ সালে দুজনকে নিয়োগ দেওয়ার মাধ্যমে উপজেলা কার্যক্রম চালু হয়। এখন পর্যন্ত সেভাবেই আছে।অতি দ্রুত জনবল কাঠামো শক্তিশালী করতে হবে।
উপসহকারী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন আমরা ২০১১ সাল থেকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর ও ত্রান মন্ত্রনলয়ের প্রকল্পে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ে কর্মরত আছি।আমরা ৪২১ জন উপ সহকারী প্রকৌশলী নিয়োগপ্রাপ্ত ছিলাম। কিন্তু দুঃখের বিষয় এখান থেকে ২১৩ জনকে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা পদে খাতে স্থানান্তর করা হয়। বাকি ১৯৫ জন উপসহকারী প্রকৌশলী বৈষম্যের শিকার হয়ে আজো আমরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি আমাদের অধিকার আদায়ের জন্য। তিনি বলেন আমাদের চাকরির বয়স ৮ থেকে ১০ বছর অতিবাহিত হয়ে গেছে। আমরা এই দপ্তরে প্রকল্পে কাজ করতে করতে নিজেদের চাকরির বয়স হারিয়ে ফেলেছি।এখন আমরা চেষ্টা করলেও অন্য কোথাও চাকরি করতে পারব না। এ অবস্থায় আমরা যদি এই দপ্তর থেকে ফিরে যাই তাহলে আমাদের অন্য কোথাও সরকারী চাকরি করার সুযোগ নাই। করোনা কালীন সময়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঘরে ঘরে ত্রাণ পৌঁছে দিয়েছি।
উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ তৌফিকুর রহমান বিপ্লব বলেন, আমাদের নিয়োগের জন্য ২০০ টি উপসহকারী প্রকৌশলী পদ সৃষ্টি থাকা সাপেক্ষেও আমাদের কোন নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না। বারবার চিঠি অর্থ মন্ত্রণালয় গেলেও তা অদৃশ্য কারণে ফেরত আসছে। আমরা এই অধিদপ্তরে ২০১১ সাল থেকে কর্মরত আছি। আমাদের একটাই দাবি এই অধিদপ্তরের রাজস্ব খাতে স্থানান্তর হওয়া।করোনাকালীন সময়ে আমরা জীবন বাজি রেখে ঘরে ঘরে ত্রাণ পৌঁছে দিয়েছি। সকল দুর্যোগে আমরা মাঠ পর্যায়ে কাজ করে থাকি। আমাদের রাজস্ব প্রকল্পের স্থানান্তর এখন সময়ের দাবী।